সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:২০ অপরাহ্ন
মো.শাফায়েত হোসেন\
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে পর্যটকদের কোলাহল থেমে গেছে। নেই কোন হৈ-হুল্লোড়। প্রতি বছর ঈদ ও সরকারী ছুটিতে পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় থাকলেও গত দুই বছর পাহাড়ে ভিন্ন চিত্র। নেই কোন পর্যটকের আনাঘোনা। এতে করে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমন রোধে ১লা এপ্রিল থেকে বান্দরবানে সব পর্যটন কেন্দ্রগুলো দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং সকল পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন স্থানীয় প্রশাসন। এরপর থেকে লকডাউনের কারণে এখনো বন্ধ রয়েছে হোটেল-মোটেল এবং সকল পর্যটন কেন্দ্র। ফলে সাড়ে তিন মাসের উপর ধরে হোটেল-মোটেল-গেইস্ট হাউস বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এতে ব্যবসায়ীরা মনে করে দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারী হলে আয়ের খাত জিরো হচ্ছে। পাশা-পাশি বেকার হয়েছে পড়ছে হাজার হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী। কারণ প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির নির্মল স্বাদ পেতে পর্যটককের ঢল নামে বান্দরবানে। বান্দরবানে রয়েছে পাহাড়-পর্বত, ঝিরি-ঝর্ণা, মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুকসহ অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র। যার কারণে ঈদ উৎসবে পর্যটকদের ঢল নামে পাহাড়ে, সেইখানে একেবারে পর্যটক শূন্য পাহাড়। খালি পড়ে রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। হোটেল-মোটেল রিসোর্টগুলো ফাঁকা। পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মূল ফটকে লাগানো হয়েছে তালা, আর র্কর্মচারীরা পার করছেন অলস সময়। পর্যটক না থাকায় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিরাজ করছে শুন্যতা। ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ট্যুরিস্ট শ্রমিকরা জানান, সাড়ে তিন মাসের উপর হয়েগেল শ্রমিকদের গাড়ী চাকা বন্ধ রয়েছে। গাড়িগুলো মালিক-শ্রমিকরা পর্যটক নির্ভরশীল এবং তাদের মাধ্যমে আমাদের আয় রোজগার। চাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্টে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। তাদের মতে,ভবিষ্যতে শ্রমিকদের ভাগ্যে কি ঘটবে বলা যাচ্ছেনা। আমরা এখন অসহায় অবস্থায় আছি, করোনার কারণে এখনও লকডাউন চলছে। ভবিষ্যতে ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে আমরা কি ভাবে দিন কাটবো জানিনা। ট্যুরিস্ট গাড়ীগুলো বন্ধ থাকায় শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছে। শ্রমিকেরা মনে করেন, সরকারের তরফ থেকে যেই পরিমান ত্রাণ সহয়তা দেওয়া হচ্ছে, সেই ত্রাণ সহায়তা নিয়ে তাদের পরিবার চালানো কষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করেন তাদের গাড়ীর চাকা ঘুরলেই তাদের আয় রোজগার হবে কেবল। বান্দরবানের হোটেল-মোটেল ও গেউস্ট হাউস ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাকালীন সময়ে এই ব্যবসা খাতে গত বছর থেকে শুধু লোকসান গুনতেছি, প্রতিদিনই লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে এবং আয়ের খাত হচ্ছে শূন্য থেকে শূন্য। প্রতি বছর ঈদে ও সরকারী ছুটিতে কিছু পর্যটকের দেখা মিলে। কিন্তু করোনা আর লকডাউনের কারণে সকল ব্যবসা বাণিজ্য থমকে গেছে। ফলে চরম সংকটে পড়ছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনাকালীন সময়ে প্রথম থেকে এ পর্যন্ত হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিক-কর্মচারিরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। মালিকপক্ষের লোকসান গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এক কথায় কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে জীবন জীবিকা স্তব্ধ করে দিয়েছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজী বলেন, করোনা সংক্রমণ আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তাই বান্দরবানের সাধারণ জনগণকে মহামারি থেকে রক্ষা করা, আর পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে পর্যটন কেন্দ্র সাময়ীক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে করোনার প্রকোপ কমে গেলে আবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্বান্ত নেওয়া হবে।
আপনার মতামত দিন