সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:১১ অপরাহ্ন
সোহেল কান্তি নাথ, নিজস্ব প্রতিনিধি বান্দরবান:
দুর্গাপূজার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। প্রতিমার অন্যান্য কাজ শেষে তাঁদের হাতে ফুটে উঠছে প্রতিমার মুখমন্ডল। কেউ আঁকছেন চুল, কেউ চোখের পাতা, আবার কারও তুলির নিপুণ ছোঁয়ায় ফুটে উঠছে চোখ। দিন-রাত পালা করে ২৪ ঘণ্টা চলছে তাঁদের এই কাজ। সারাদেশের মতো পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও চলছে দুর্গোৎসবের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, অন্যদিকে পূজায় জাঁকজমক আয়োজনসহ আইনশৃংখলা রক্ষায় সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিটি ও পুলিশের সদস্যরা।
আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে মহাসমারোহে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গোৎসব। দেশের অন্যান্য জেলার মতো পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও মাতবে দুর্গতিনাশিনি মা দূর্গার আরাধনায়। মা দেবীকে বরণ আর তার আরাধনার জন্য জেলার বিভিন্নস্থানে এখন চলছে পূজার মন্ডপ তৈরির প্রস্তুুতি, প্রতিমা তৈরি ও সাজসজ্জার কাজ, আর শেষ মহুর্তে ব্যস্ত সময় কাটাছে প্রতিমা তৈরির কারিগর ও সাজসজ্জাকারীরা। কেন্দ্রীয় দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে রাজারমাঠে বিশাল মন্ডপ তৈরি করে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন চলছে রং করার কাজ। রাজবাড়ী থেকে প্রতিমা তৈরি করতে আসা কারিগর বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ৫লক্ষ টাকা দামে আমরা এবারে কেন্দ্রীয় দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিমা তৈরির কাজ করছি, আর এবারের মন্ডপ আমরা নতুনভাবে সাজাচ্ছি যেন ভক্তরা পূজায় এসে আনন্দিত হয় পুলকিত হয়। প্রতিমা তৈরির কারিগর বিশ্বজিৎ পাল আরো বলেন, আমরা ৫জনের একটি দল রাতদিন শ্রম দিয়ে সুন্দর একটি পূজামন্ডপ ও প্রতিমা তৈরি করছি আর দীর্ঘ ২মাস কাজ করে আমরা বান্দরবান কেন্দ্রীয় দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের জন্য সুন্দর পূজামন্ডপ উপহার দিতে পারবো বলে প্রত্যাশা করছি। সাজসজ্জাকারী অমল দাশ জানান, এবারে আমরা নতুনভাবে রাজার মাঠকে সাজাবো যেন সবাই পূজায় এসে মাকে প্রণাম জানানোর পাশাপাশি পূজামন্ডপের পরিবেশ দেখে আনন্দিত হয়। সুত্রে জানা যায়, বান্দরবান জেলায় এবার সব মিলিয়ে পূজামন্ডপ হবে ৩২টি, যার মধ্যে শুধু জেলা সদরেই মন্ডপ হবে ১০টি। স্থানীয় রাজার মাঠেই তৈরি করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষনীয় পুজা মন্ডপ, ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় ৪০লক্ষ টাকা। আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবারে দুর্গাদেবীর প্রতিমা ছাড়াও তৈরি করা হচ্ছে নজর কারা বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা ও মন্দির। অনুষ্ঠান সুন্দর ও সফল করতে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিও সেরে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
বান্দরবান কেন্দ্রীয় দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তাপস কান্তি দাশ জানান, দক্ষিন চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পূজা মন্ডপ তৈরী করা হয় বান্দরবান শহরের রাজার মাঠে। প্রতিবছর বান্দরবান জেলা সদরের পূজা মন্ডপ দেখতে প্রচুর ভক্তদের পাশাপাশি অসংখ্য পর্যটক বান্দরবানে বেড়াতে আসে।
সভাপতি তাপস কান্তি দাশ আরো জানান, এবারে মহাদেব শিব এর তপস্যার স্থান কৈলাস পর্বত এর অনুসরনে পর্বত আর ঝর্ণাসহ বিভিন্ন দেবদেবীর রুপ এবং তাদের আর্বিভাবের ঘটনা নিয়ে আর্কষণীয় প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অলক ধর বলেন, বান্দরবান কেন্দ্রীয় দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের প্রায় ৪০লক্ষ টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে এবারের পূজা সফলভাবে সমাপ্ত করতে আর সকলের সহযোগিতায় এবার আরো জাকজমকপূর্ণভাবে আমরা আমাদের পূজা উদযাপন করবো।
এদিকে সনাতন ধর্মালম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আইনশৃংখলা রক্ষায় সার্বিক প্রস্তুতির কথা জানালেন জেলার পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, বান্দরবানের প্রতিটি পূজামন্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা প্রতিটি পূজামন্ডপের কমিটির সাথে সভা করেছি এবং তাদের সচেতন করার পাশাপাশি প্রতিটি মন্ডপে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন ও নিজস্ব ভোলেনটিয়ার নিয়োগ করার পরামর্শ প্রদান করেছি। পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন আরো বলেন,পূজাকে ঘিরে পুলিশের নিরাপত্তা কার্যক্রম আরো জোরদার করা হয়েছে ।
আগামী ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বান্দরবান রাজারমাঠে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন ও দেবীর মুখউন্মোচন করবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপি, আর নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পাঁচদিনব্যাপী জাঁকজমক আয়োজন শেষে ২৪ অক্টোবর সকালে বিজয়া দশমী উদযাপনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্শালম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজার সফল সমাপ্তি ঘটবে।
আপনার মতামত দিন