সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন
মো. শাফায়েত হোসেন\
বান্দরবানে আট বছর পরও চালু হয়নি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণা কেন্দ্র। ব্যবহারের অভাবে বছরের পর বছর ষ্টোর রুমেই পড়ে আছে মূল্যবান অনেক যন্ত্রপাতি। পর্যাপ্ত সমতল ভ‚মি ও জনবল সঙ্কটের কারণে অকেজো হয়ে পড়েছে অব্যবহৃত অনেক যন্ত্রপাতিও। দুইজন স্টাফ দিয়ে কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে বান্দরবানের এ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি। বান্দরবান জেলার প্রবেশমুখ মেঘলা এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় সাড়ে ৪ একর জায়গার উপর ৩কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি। ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হলেও দীর্ঘ আট বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও এখনো পুরোদমে চালু হয়নি জেলার এ আবহাওয়া কেন্দ্রটি। জনবল না থাকায় পরিচর্যার অভাবে লতাপাতা আর আগাছায় ভরে গেছে চারপাশের পরিবেশ। বাইরে থেকে দেখে মনে হয় যেন পরিত্যাক্ত বাংলো বাড়ী। অল্পকিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে সীমিত পরিসরে চালু হলেও পর্যাপ্ত সমতল ভূমির অভাবে এখনো স্থাপন করা সম্ভব হয়নি সব যন্ত্রপাতি। এর ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অব্যবহৃত মূল্যবান অনেক যন্ত্রপাতি। যে কয়টি সচল যন্ত্রপাতি আছে জনবলের অভাবে সেগুলো দিয়েও পুরোপুরি আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানাও সম্ভব হয় না। প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া কেন্দ্র থাকার পরও দূর্যোগ মুহুর্তে স্থানীয় ভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় কৃষি মৎস্যসহ পাহাড় ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের।
এদিকে স্থানীয়দের মতে, প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রবণ এলাকা হওয়ায় আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস পেলে বন্যা পাহাড় ধ্বসসহ নানা দূর্যোগে মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়া সহজ হয়। কারণ বান্দরবানের আবহাওয়া কেন্দ্র থেকে বার্তাগুলো পেলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে মানুষ খুব উপকৃত হতো। তারা মনে করে রাষ্ট্্রীয় টাকা খরছ করে প্রথম শ্রেনি আবহাওয়া কেন্দ্রটি করা হলেও স্থানীয়দের কোন কল্যাণে আসেনি। বান্দরবান বেতার এর জেলা প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম বাচ্চ বলেন, বান্দরবান একটি খুবই গুরুত্ব জেলা এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ এলাকা, আবহাওয়া কেন্দ্র থেকে আগাম পূর্বাভাস যদি সঠিক সময় পাওয়া যায় তাহলে মানুষ সর্তক হতে পারে এবং প্রশাসনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে আবহাওয়া কেন্দ্রটি চালু না হওয়ায় এখানকার মানুষ সেবাটা পাচ্ছে না। বান্দরবান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী সিনিয়র শিক্ষক আমিনুল রহমান বলেন, বান্দরবান একটি আবহাওয়া কেন্দ্র আছে বলে শুনেছি, কিন্তু এই আবহাওয়া কেন্দ্রর কার্যক্রম কোনদিন আমরা দেখি নাই। বাংলাদেশ বেতার বান্দরবান কেন্দ্র থেকে ঢাকা কেন্দ্রীক যে আবহাওয়া বার্তা প্রচার করা হয়, তার পাশাপাশি স্থানীয় আবহাওয়া কেন্দ্র থেকে বার্তা প্রচার করা হতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে এলাকার মানুষ খবই উপকৃত হতো।
অপরদিকে বান্দরবান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রের ভারপ্তাপ্ত কর্মকর্তা-সনাতন কুমার মন্ডল বলেন, বান্দরবান আবহাওয়া কেন্দ্রে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বায়ুর আদ্রতা, বায়ুচাপ, বায়ুর গতিবেগ পরিমাপের যন্ত্র রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত সমতল জায়গা না থাকায় অনেক যন্ত্র থাকার পরও এখনো স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার হিসেবে ৮জন কর্মকর্তা কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২ জন। তবে পর্যাপ্ত জনবল ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের জায়গা পেলে আবহাওয়া কেন্দ্রটি পুরোদমে চালু করা সম্ভব হবে বলে মনে করে বান্দরবান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
আপনার মতামত দিন