সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:১০ অপরাহ্ন
সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান নিজস্ব প্রতিনিধি॥
বান্দরবানে পরীক্ষামূলক গ্রীষ্মকালীন টমেটো বারি- ৮ চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে কৃষকদের। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট উদ্ভাবিত বারি- ৮ নামে নতুন জাতের এই গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিডের টমেটো চাষ করে আশার আলো দেখছেন বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাষিরা। ইতিমধ্যে উন্নত জাতের এই টমেটো চাষে ব্যাপক ফলনও পেয়েছেন তারা। ভালো দাম পাওয়ায় ভাগ্য বদলাচ্ছে তাঁদের। শনিবার সকালে নতুন জাতের হাইব্রিড বারি- ৮ টমেটো চাষে উদ্ভুদ্ধ করার জন্য বান্দরবান সদর উপজেলার রেইছা লম্বা রাস্তা এলাকায় বান্দরবান কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের উদ্যোগে মাঠ দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বিএআরআই এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাজহারুল আনোয়ার। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য ক্য সা প্রু, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বান্দরবানের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম, কর্মসূচী পরিচালক, ড. মো: ফারুক হোসেন, বান্দরবানের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তানহারুল ইসলাম লেলিনসহ বান্দরবান কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রান্তিক কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বলেন, পরীক্ষামূলক ভাবে বান্দরবানে এই প্রথম গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করা হয়েছে। প্রথমবার হিসেবে ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরাও অত্যন্ত খুশি। তিনি আরও বলেন, বান্দরবানের মাটি গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে উপযোগী। পরবর্তীতে আমরা বান্দরবানের পুরো জেলায় এই গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটো চাষের উদ্ভুদ্ধকরণ পাশাপাশি কৃষকদের বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
বান্দরবানের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তানহারুল ইসলাম লেলিন বলেন, পরীক্ষামূলক ভাবে বান্দরবানের রেইছা লম্বা রাস্তা এলাকায় ৩ বিঘা জমিতে বারি টমেটো-৮ চাষ করা হয়। এসব কৃষকদের এ টমেটো চাষের জন্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বীজ, সার, কীটনাশক ও হরমোন দেয়া হয়। কৃষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ টমেটো চাষে দক্ষ করা হয়। তিনি আরও বলেন, এ টমেটো দুই মাসের মধ্যে ফলন দেয়। অন্যান্য জাতের চেয়ে এ টমেটোর আকার বড় ও কালার হওয়ায় তারা বাজারে কেজি ৮০-১০০ টাকায় দামে বিক্রি করতে পারছেন। দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা অত্যন্ত খুশি।
রেইছা লম্বা রাস্তা এলাকার কৃষক আমেন বেগম বলেন, বান্দরবান কৃষি অফিসের মাধ্যমে আমরা এই প্রথম ১ বিঘা জমিতে হাইব্রিড টমেটো বারি- ৮ চাষ করেছি। প্রথমবার হিসেবে ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। শীতের শুরুতে এই ফলন পাওয়ায় বাজারে দামও ভালো পাচ্ছি।
ঐ এলাকার আরেক কৃষক বাবু দে বলেন, আগে আমি অন্যান্য সবজির চাষ করতাম। এ বছর মাত্র এক শতক জমিতে বারি টমেটো-৮ চাষ করেছি। তিনি আরো বলেন, এই টমেটো চাষ করে উৎপাদন করে যে লাভ করা সম্ভব তা অন্য জাতের টমেটো বা সবজি চাষে সেটি সম্ভব হয়না। এছাড়া এই টমেটোর জাতটি অনেকটা বেশি রোগ প্রতিরোধক। গ্রীষ্মকালে ফল ধারণের জন্য হরমোন প্রয়োগ না করলেও চলে। এসব কারণে তারা বারি টমেটো-৮ চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান কৃষকরা।
বান্দরবান সদর উপজেলর রেইছা লম্বা রাস্তার দুই ধারে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে হাইব্রিড বারি- ৮ টমেটো ক্ষেত। প্রতিটি ক্ষেতই পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। পলিথিনের ঢাকা এসব শেডের নিচের গাছগুলোতে থরে থরে ঝুলে রয়েছে সবুজ ও লাল রঙের টমেটো। কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণ টমেটোর ফলন এসেছে।
আপনার মতামত দিন