সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০৬ অপরাহ্ন
সোহেল কান্তি নাথ, নিজস্ব প্রতিনিধি বান্দরবান॥
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেছেন, জেলা প্রশাসক হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করেছি তা আমার সারাজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাথে বাঙ্গালিদের সুন্দর বসবাসযোগ্য সম্প্রীতির বান্দরবান সবসময় সুন্দর ছিল, আগামীতে ও সুন্দর থাকবে এই কামনা। রবিবার (২৩ জুলাই) সকালে বান্দরবান জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাকক্ষে এই বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসক বলেন, বান্দরবানে প্রচুর ক্রীড়াবিদ রয়েছে, আর তাদের সঠিকভাবে মনিটরিং ও সহযোগিতা করলে যেকোন প্রতিযোগিতায় বান্দরবানের নাম আরো উজ্বল হবে। এ সময় জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুরাইয়া আক্তার সুইটি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি মো. আব্দুর রহিম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রশিদ, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক লক্ষীপদ দাসসহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন সদস্য এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। বিদায় সংবর্ধনার শেষ পর্যায়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজিকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে বিদায়ী সংবর্ধনা জানানো হয়। প্রসঙ্গত, গত ৬ জুলাই বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজিকে বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব হিসেবে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আর তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
এদিকে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বেদায় কর্মদিনে আবেগময় ফেইসবুক বার্তায় লিখেছেন- প্রায় দুই বছর সাত মাসের কর্মকালের সমাপ্তি ঘটিয়ে বিদায় নিতে যাচ্ছি। বিদায় লগ্নে আমি মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট শোকরিয়া জানাচ্ছি সুস্থসহ শরীরে সকলের ভালবাসা ও সহযোগিতায় সরকার নির্ধারিত আমার কর্মকাল যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারায়।গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর প্রতি যার জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতোনা এবং আমার পক্ষে ও জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হতোনা। আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপণ করছি ভিশনারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি যিনি তিন পার্বত্য জেলার প্রথম নারী জেলাপ্রশাসক হিসেবে আমাকে নিয়োগ প্রদান করেছেন এবং প্রজাতন্ত্রের একজন সেবক হিসেবে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীসহ বান্দরবান জেলায় বসবাসকারী বারো জাতির সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।এ জেলার কৃতি সন্তান, টানা ছয় ছয়বার নির্বাচিত এমপি,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এঁর প্রতি অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি যিনি সুপরামর্শ ও সদয় নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে আমার কর্মকালকে সহজ ও তাৎপর্যপূর্ণ করে দিয়েছেন। আমার এ কর্মকালে যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সম্মানিত মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্যারসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন উইংয়ের যেসকল কর্মকর্তা নির্দেশনা ও সুপরামর্শ দিয়ে আমার কাজকে সহজ করে দিয়েছেন তাঁদের সকলের প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কলা গাছের সুতায় তৈরি কলাবতী শাড়ী, কলার তন্তর জুয়েলারী, মাচাং ঘর ইত্যাদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট জেলা প্রশাসন বান্দরবানের পক্ষ হতে উপহার হিসেবে প্রদানের ক্ষেত্রে পরম শ্রদ্ধেয় মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্যার যে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি যে স্নেহ দেখিয়েছেন জেলাপ্রশাসকসহ জেলাপ্রশাসনের সকল কর্মকর্তা তা আজীবন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ রাখবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্যার ও তাঁর টিমের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। সকলকে নিয়ে সম্মিলিত টিম ইফোর্টের মাধ্যমে অর্থবহ ও কার্যকরভাবে কর্মকাল শেষ করতে পারা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের, আনন্দের। বিগত ০৪ জানুয়ারী ২০২১ এ জেলায় যোগদানের মুহূর্ত থেকে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর সাত মাসের কর্মকালে সরকারের সার্বিক বিষয় সমন্বয় সাধন,শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা,উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিতকরণসহ অর্পিত অন্যান্য দায়িত্ব পালনে আমি আমার আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে শতভাগ সচেষ্ট ছিলাম। এ সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এঁর অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘আশ্রয়ন’ এর সেমিপাকা ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণের জন্য তাঁদের জীবনযাত্রা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুমোদনপ্রাপ্ত মাচাংঘর নির্মাণ, মহামারী করোনা মোকাবেলা, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবস পালন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন, বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক মেলার আয়োজন,অসংখ্য ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন,স্বচ্ছতার সাথে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দুইটি পৌরসভা ও সাতটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন আয়োজন, জেলাপ্রশাসক ট্যালেন্ট হান্টের আয়োজন,কালেক্টরেট স্কুল ও কলেজে জেলাপ্রশাসক মেধাবৃত্তি চালুকরণ, কলাগাছের সুতা তৈরি ও তা থেকে সুতাজাত হস্তশিল্পজাত পণ্য এবং শাড়ি তৈরিসহ দৈনন্দিন কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসন, বান্দরবানের সকল সদস্য নিরলস শ্রম ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছেন। বান্দরবান জেলার সম্মানিত সকল জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সম্মানিত কর্মকর্তাবৃন্দ, সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী, সাংবাদিকবৃন্দ, ক্রীড়া সংস্থার সকল সদস্যবৃন্দ এবং সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের সকল কাজ অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বিধায় আমি সকলের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।আমার ব্যক্তিগত এবং জেলা প্রশাসন, বান্দরবানের সকল সহকর্মী’র পক্ষ থেকে আমার এ কর্মকাল যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারার পেছনে যাদের সহযোগিতা ও অবদান ছিল তাদের প্রত্যেকের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।আজ ২৪.০৭.২০২৩ তারিখ নবাগত জেলাপ্রশাসক জনাব শাহ মুজাহিদ উদ্দীন এঁর নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে আমি বান্দরবান ত্যাগ করতে যাচ্ছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং একান্তভাবে কামনা করি নতুন জেলাপ্রশাসকের নেতৃত্বে ভবিষ্যতে পরিচালিত জেলা প্রশাসন, বান্দরবানের সকল কাজে আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
আপনার মতামত দিন