সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০৮ অপরাহ্ন
মো.শাফায়েত হোসেন \
বান্দরবানে স্বল্প সময়ে লাভজনক হওয়ায় ড্রাগন ফল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন চাষিরা। জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ী জুম চাষে আগ্রহ থাকলেও আর্থিভাবে লাভবান হওয়ায় ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে। পাহাড়ের মাটি ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী। এর ফলে বান্দরবানে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ড্রাগন ফলের আবাদ। আবার অনেক চাষী পরিক্ষামূলক ভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করে সফলতা পেয়েছে। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছোট ছোট বাগান করে এ ফলের চাষ শুরু করেছেন অনেকে। সুস্বাদু,পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণ থাকায় এ ফলের দেশে চাহিদা অনেক বেড়েছে। তবে স্থানীয় চাষীরা বাজারে বিক্রিও শুরু করে দিয়েছে এবং পাইকারী ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এদিকে বান্দরবান জেলায় প্রথমদিকে দুয়েকজন চাষী ড্রাগন ফলের চাষাবাদ শুরু করলেও বর্তমানে বান্দরবানের লামা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, রুমা, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং সদর উপজেলার চিম্বুক পাহাড়, বালাঘাটা, কুহালংসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাবে শুরু হয়েছে ড্রাগন ফলের চাষ। প্রতি বছর এপ্রিল মে মাসে জমি তৈরী করে লাগানো হয় ড্রাগন চারা। মাস দুয়েক পরিচর্যার পর পরিপক্ক হলে জুন জুলাইয়ে বাজারে বিক্রীর উপযুক্ত হয় ড্রাগন ফল। বছরে একটি বাগান থেকে ৩-৪ বার ফল আহরণ করা যায়। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বাজারে বিক্রি হয় ৩শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা। স্বল্প খরচ, উৎপাদন বেশী, পরিশ্রম কম হওয়ায় এবং বাজারে এর চাহিদা থাকায় বর্তমানে অনেকেই নিজস্ব জায়গা জমিতে ড্রাগন ফল চাষের দিকে ঝুঁকছে।
অপরদিকে চিম্বুক বসন্তপাড়ার ড্রাগন চাষী তোয়া ¤্রাে বলেন ২০১৬ সালে বান্দরবানের হর্টিকালচার থেকে ৩শ ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করে চাষাবাদ শুরু করি ড্রাগন ফলের। বর্তমানে ৩ হাজারের বেশি ড্রাগনের চারা রয়েছে। বাগানে ফলনও ভাল হয়েছে কিন্তু লকডাউনের কারণে বিক্রী করতে সমস্যা হচ্ছে দাম কম পাচ্ছি। রোয়াংছড়ি এলাকার ড্রাগন চাষী মেল থাং বম বলেন আমি ৫ একর জায়গায় ড্রাগন ফলের আবাদ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে। পরিশ্রম কম খরচও কম এবং এক গাছ থেকে ২-৩ বার ফল আহরণ করা যায় তাই ভালভাবে বিক্রী করতে পারলে ভাল লাভ হবে বলে আশা করছি। কিন্তু লকডাউনের কারণে বাজারে চাহিদা একটু কমে গেছে ফলও পেকে গেছে তাই অল্প দামে বিক্রী করে দিতে হচ্ছে। লকডাউন না থাকলে আরো ভাল দাম পেতাম। তবে ড্রাগন ফল কিনতে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী বলেন লকডাউনের কারণে গাড়ী ভাড়া বেড়ে গেছে এবং বাজারে ক্রেতা না থাকায় চাহিদাও একটু কমে গেছে তাই আমরাও ভাল দাম পাচ্ছি না। তবে সংরক্ষণাগার না থাকায় চাষীরা ফল আহরণ করে সংরক্ষণ করতে না পারায় ফল পাকার সাথে সাথে বিক্রী করে দিতে হয়। এতে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন চাষীরা।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বান্দরবানে দিন দিন ড্রাগন ফলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ১শ ১০মেট্রিকটন। কৃষি বিভাগ আরো জানান, যে কোন জায়গায় ড্রাগন ফল চাষ করা যায় এটি চাষে পানিরও বেশী প্রয়োজন হয় না। চারার দামও কম ১৫- ২০ টাকায় পাওয়া যায় এবং একটি চারা গাছ থেকে কাটিং করে ৪০-৫০ টি চারা তৈরী করে রোপণ করা যায়। আর শুধুমাত্র জৈবসার ব্যবহারেই পরিপক্ক হয়ে উঠে ড্রাগন গাছ।
বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক-ড.এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ড্রাগন একটি পুষ্টিকর ফল। এ ফলে রয়েছে অধিক পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অল্প খরচে অধিক লাভ হয় বলে অনেকেই এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। জেলাসহ আশ-পাশের উপজেলাতেও এই ফলের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ফল চাষ করতে জৈব সার একটু বেশি লাগে। রাসায়নিক সার কম লাগে। তাই অধিক লাভ করা যায়। ড্রাগন ফলের দাম আকার ও আকৃতি ভেদে প্রতি কেজি ফল ৩শত টাকা থেকে ৪শ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। লকডাউনের কারণে বাজারজাত করণে কৃষকদের একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বান্দরবানের ড্রাগন ফল বিক্রী করা হচ্ছে।#
আপনার মতামত দিন